আসসালামু আলাইকুম ।

রোজার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রোজার অতিপ্রয়োজনীয় কয়েকটি জরুরি মাসলা বর্ণনা করা হলো।
নিয়তঃ নিয়ত অর্থ মনের সঙ্কল্প। আরবি বা বাংলাতে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং মনে মনে নিয়ত করাই জরুরি। নিয়ত হবে 'আমি আগামীকাল রমজানের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম।' ফরজ রোজার নিয়ত ফজরের আজানের আগে করতে হবে।
রোজার নিয়তঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিনশাহরি রামাদ্বনাল মুবারাকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহ ফাতাক্বাববাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাসসামীয়ু'ল আ'লীম।
সেহরী খাওয়াঃ সেহরী খাওয়া সুন্নাত এবং এর অনেক ফজিলত ও রয়েছে । তাই ক্ষুধা না থাকা সত্তেও কিছু পরিমানে খাবার খাওয়া উত্তম । তবে কেউ প্রবল নিদ্রার কারণে ঘুম থেকে উঠতে না পারলে শুধু নিয়ত করেই রোজা রেখে দেবে । সেহরী না খেলে রোজা তরক করতে পারবেনা । (ফাতওয়া এ জামিয়া )
কাজাঃ কাজা হচ্ছে একটির বদলে একটি, অর্থাত কেউ যদি এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ে তাহলে তাকে পরে সেই ওয়াক্ত টি পড়ে নিয়াযকে কাজা বলে । তদ্রুপ যে সমস্ত কারণে রজার কাজা ওয়াজিব হয় সেই ক্ষেত্রে তার একটি রাজা রাখাই যথেষ্ট ।
ইফতারঃ সারা দিন রোজা রাখার পর রোজা শেষ করবেন ইফতারির মাধ্যমে। ইফতার করা সুন্নত। মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। অন্য যে কোনো খাবার ও পানি দিয়েও ইফতার করা যাবে। খেজুর দিয়ে ইফতার করা উত্তম। কেননা আমাদের প্রিয় নবী (সা.) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।
ইফতারের দোয়াঃ আল্লাহুম্মা ছুমতুলাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ'লা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বি রাহমাতিকা ইয়া আর্ হামার রাহিমীন।
কাফফারাঃ কাফফারা হছে একটির বদলে ৬০ টি এবং ৬০ টি রোজা একাধারে রাখতে হবে যদি মাঝ থেকে এক টি রোজা ছুটে যায় তবে আবার ৬০ টি রোজা রাখতে হবে । তবে যদি ৬০ টি রোজা একাধারে রাখতে সক্ষম না হয়, তাহলে ৬০ জন মিসকিন কে তৃপ্তি সহকারে ২ বেলা খাওয়াতে হবে,অথবা একজন মিসকিন কে ৬০ দিন ২ বেলা করে খাওয়াতে হবে ।
*রোজা অবস্থায় ইচ্ছা কৃত ভাবে কোনো কিছু খেলে অথবা পান করলে তার উপর রজার কাজ ও কাফফারা উভয় টিই ওয়াজিব হবে ।
*রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী ইচ্ছাকৃত ভাবে দৈহিক মিলন ঘটলে তাদের উপর রোজার কাজা ও কাফফারা উভয় টিই ওয়াজিব হবে ।
*অনিচ্ছায় পানি/ খাবার খেলে/গোসলের /অজুর সময় পেটে পানি চলে গেলে /ইচ্ছা কৃত ভাবে হস্ত মৈথুন / স্ত্রী কে স্পর্শ করার কারণে বীর্য পাত ঘটলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তার কাজ আদায় করতে হবে কিন্তু ক্ফারা ওয়াজিব হবেনা ।
ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় কোনো কারণে রোজা ভেঙ্গে গেলে সেটির পুনরাবৃতি যেন না ঘটে অর্থাত ভুল বসত কেউ রোজা অবস্থায় খাবার খেয়ে ফেলল, “পরবর্তিতে সে চিন্তা করলো যে যাহেতু রোজা ভেঙ্গেই ফেলেছি সেহেতু আজকে আর রোজা রাখবোনা” এমন টি কিন্তু ঠিক নয় বরং যখনি তার রজার কথা মনে পড়েছে তখন থেকেই সে যেন এলার্ট হে যায় বাকি দিনে যেন এমনটি না হয় এবং ইফতারের আগ পর্যন্ত আর যেন কোনো কিছু না খায় ।
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়ঃ কানে বা নাকে ওষুধ দিলে, ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি করে বমি করলে বা অল্প বমি আসলে তা গিলে ফেললে, কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে কণ্ঠনালি পর্যন্ত পানি চলে গেলে, ধূমপান করলে, রোজা ভেঙে গেল মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে আবার কিছু খেলে, রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সেহরি খেলে, ইফতারের সময় হওয়ার আগেই সময় হয়ে গেছে মনে করে সময় হওয়ার আগেই ইফতার করলে, দুপুরের পর ফরজ রোজার নিয়ত করলে।
যেসব কারণে রোজা ভাঙে নাঃ মিসওয়াক করলে, চোখে সুরমা বা কোনো ওষুধ দিলে, খুশবু লাগালে বা তার ঘ্রাণ নিলে, গরম বা তৃষ্ণার কারণে গোসল করলে বা বারবার কুলি করলে, মুখে থুতু এলে এবং তা গিলে ফেললে, সাপ বা অন্যান্য পোকামাকড় কামড় দিলে, রোজা অবস্থায় দাঁত উঠালে কিন্তু রক্ত পেটে না গেলে, অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর ধোঁয়া, ধুলাবালি বা পোকামাকড় প্রবেশ করলে রোজা ভাঙে না।
আর আসুন পবিত্র এই মাসটির কথা মাথায় রেখে সব ধরনের পাপ কে বর্জন করি । আসলে যে সমস্ত পাপ কাজে আমরা লিপ্ত হই সে গুলো কিন্তু একদমই খনিকের সর্বোচ্চ ১ মাস এর রেশ আমাদের ভেতর থাকে । কিন্তু দেখুন মৃত্যুর পর যে জীবন সেই জীবনের কিন্তু কোনো মৃত্যু নেই । তাই আসুন একটু কষ্ট করে হলেও অন্তত এই মাসটির জন্য (যারা রোজা রাখব এবং রাখবোনা) আমাদের সমস্ত পাপ কে দুরে রাখি ।
No comments:
Post a Comment